পুরুষের নানা সমস্যার মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে গোপনাঙ্গে চর্ম রোগ জনিত সমস্যা। এটা হয়ে থাকে মূলত গোপনাঙ্গ অপরিষ্কার থাকার কারণে। গোপনাঙ্গ অপরিষ্কার থাকায় রোগ-জীবাণু খুব সহজেই সেখানে সংক্রমণ করতে পারে। এটা হয়ে থাকে মূলত পুরুষের অসচেতনতার কারণে এবং গোপনাঙ্গ অযত্নের কারনে । চর্ম রোগের মধ্যে একটি অন্যতম রোগ হচ্ছে পেনিসের মাথায় গুটি গুটি হয়ে যাওয়া।
পেনিসের মাথায় গুটি গুটি হাওয়া গুলো সব সময় বড় সমস্যা কে ইঙ্গিত করে না কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় সেগুলো ভয়াবহ রোগের ইঙ্গিত প্রদর্শন করে। তাই পেনিসের মাথায় গুটি গুটি এগুলো কে হালকা ভাবে নিলে চলবে না, না হয় পরবর্তীতে সমস্যাটি অনেক বড় হয়ে যেতে পারে। আজকে আমরা পেনিসের মাথায় গুটি গুটি এগুলো কেন হয় এবং এগুলো চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পেনিসের মাথায় গুটি গুটি এগুলো কেন হয়
বেশিরভাগ সময় পুরুষের পেনিসের গুটি গুটি হয়ে যাওয়ার কারণ গোপনাঙ্গ পরিষ্কার থাকা এছাড়াও মাঝেমাঝে প্রাকৃতিকভাবেও এটা হয়ে থাকে। সেগুলো খুবই স্বাভাবিক ব্যাপ। এগুলো একা একাই পরবর্তীতে ঠিক হয়ে যায় এগুলোতে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না।
পুরুষের গোপনাঙ্গের অগ্রভাগে (গ্ল্যান্স পেনিস) ছোট ছোট গুটি বা দানা দেখা যাওয়া একটি সাধারণ ব্যাপার। এটি সবসময় কোনো ভয়ঙ্কর রোগের লক্ষণ নয়। অনেক সময় এটি প্রাকৃতিকভাবে হয়ে থাকে, যেমন:
পিয়ারলি পেনাইল প্যাপিউলস (PPP): এটি একটি সাধারণ ও নিরীহ কন্ডিশন যেখানে পেনিসের মাথার চারপাশে ছোট ছোট মণির মতো গুটি দেখা যায়।
ফোর্ডাইস স্পটস: এটি তৈলগ্রন্থি, যা সাধারণত ত্বকের নিচে সাদা বা হলুদ গুটির মতো দেখা যায়।
হাইড্রাডেনাইটিস বা ঘর্মগ্রন্থির প্রদাহ: এটিও গুটি সৃষ্টি করতে পারে।
তবে, কিছু ক্ষেত্রে এই গুটিগুলো যৌনবাহিত রোগ (STD) এর লক্ষণও হতে পারে, যেমন: হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস [HPV],হার্পিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস,সিফিলিসের প্রাথমিক চিহ্ন।
তাই নিজের সঙ্গীকে সুস্থ রাখতে হলে পেনিসের মাথায় গুটি গুটি হয়ে থাকলে সে সময় যৌন মিলন থেকে বিরত থাকায় উত্তম। তবে যৌন মিলন করলে অবশ্যই কনডম ব্যবহার করা। যার ফলে পুরুষের দ্বারা তার সঙ্গে সংক্রামিত হবে।
কিন্তু এগুলোকে ছোট ভেবে তুচ্ছ করা যাবে না। পরবর্তীতে এই জিনিসগুলো আরো বড় হতে পারে। তাই শুরুতেই অর্থাৎ এগুলোর প্রাথমিক অবস্থাতেই ডাক্তারের কাছে গিয়ে সঠিক পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করা এবং ডাক্তারের প্রথমত সকল কাজগুলো মেনে চলা। তাহলে দ্রুত এগুলো সেরে যাবে।
পেনিসের মাথায় গুটি গুটি চুলকানি
কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় পেনিসের মাথায় গুটিগুটি হয় এবং তার চুলকায়। এগুলো হয় চুলকানি জনিত চর্মরোগ বা অ্যালার্জি জনিত কারণে। একেকজনের এলার্জি একাদ রকম জিনিসও থাকতে পারে। চুলকানি মূলত গোপনাঙ্গ অপরিষ্কার থাকার কারণে বাসা বাঁধতে পারে। তবে বেশিরভাগ দেখা যায় পেনিসের মাথায় গুটি গুটি চুলকানি গুলো এলার্জির কারণে হয়ে থাকে।
এছাড়াও আরো কিভাবে চুলকানি হতে পারে নিচে তার কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া হল যেমন: ছত্রাক সংক্রমণ (Fungal infection): Candida নামক ছত্রাকের কারণে গুটির সঙ্গে চুলকানি হয়। এটা সাধারণত পেনিসের ছত্রাকের সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। অপরিষ্কার পেনিসে ছত্রাক সংক্রমণ করে থাকে। অপরিষ্কার জায়গায় সংক্রমণ করা তাদের জন্য অনেক সুবিধা হয়। ছত্রাকের সংক্রমণের ফলে পেনিসে গুটি গুটি হয়ে যায় এবং এটি রাত্রেবেলা একটু বেশি চুলকায়। তাই আমাদের উচিত পেনিস কে সব সময় পরিষ্কার রাখতে তাহলে আমরা এগুলো থেকে বাঁচতে পারবো।
ব্যালানাইটিস: পেনিসের মাথায় প্রদাহ ও চুলকানি, যা হাইজিন না মানার ফলে হতে পারে।
অ্যালার্জি: কনডম, সাবান বা লুব্রিকেন্টে থাকা রাসায়নিক পদার্থেও হতে পারে।যদি এই জিনিসগুলোতে অ্যালার্জি থেকে থাকে তাহলে এগুলো ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
পেনিসের মাথায় গুটি গুটি চিকিৎসা
চিকিৎসা নির্ভর করে গুটি হওয়ার কারণের উপর। নিচে সাধারণ চিকিৎসার কিছু ধাপ দেওয়া হল:
পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা: প্রতিদিন হালকা গরম পানি দিয়ে গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করা উচিত।
অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম: যদি ছত্রাকজনিত সংক্রমণ হয়, তাহলে ফ্লুকোনাজল বা ক্লোট্রিমাজল জাতীয় ক্রিম ব্যবহার করা হয়।
অ্যান্টিবায়োটিক: ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক নিতে হয়।
ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ: যদি লক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হয় বা STD-এর সম্ভাবনা থাকে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় এগুলোর চিকিৎসা করা উত্তম।
পেনিসের মাথায় গুটি গুটি ঔষধ
পেনিসের মাথায় গুটি গুটি হয়ে গেলে প্রথমত দেখতে হবে সেটা এলার্জি কিংবা চুলকানি জনিত রোগ কিনা। যদি কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসে তাহলে ডাক্তারের কাছে যাবার প্রয়োজন নেই। কিন্তু তাদের সময় ধরে থাকলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া অত্যাবশক । এবং ডাক্তারের কাছে গেলে তারা প্রায় কিছু ওষুধ এবং কিছু নির্দিষ্ট মলম বা ক্রিম ব্যবহার করার জন্য বলে থাকেন।
নিচে কিছু ঔষধের নাম দেওয়া হলো, তবে যেকোনো ঔষধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক:
- ফ্লুকোনাজল (Fluconazole) – ছত্রাক সংক্রমণের জন্য
- হাইড্রোকরটিসন ক্রিম – প্রদাহ কমানোর জন্য
- অ্যাসাইক্লোভির (Acyclovir) – হার্পিস ভাইরাসের জন্য
- অ্যামক্সিসিলিন/ক্ল্যাভুলানেট – ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণে ব্যবহৃত হয়
এই ওষুধ এবং ক্রিমগুলো ডাক্তারের কথামতো খেলে এবং ডাক্তারের সকল নিয়মকানুন গুলো মেনে চললে খুব তাড়াতাড়ি এগুলো ভালো হয়ে যাবে। তাছাড়া পেনিসের মাথায় গুটি গুটি হয়ে গেলে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না ঠান্ডা মাথায় সব কাজ করতে হবে। অন্যথায় আতঙ্কিত হয়ে বিপদ বাড়তে পারে।
পেনিসের মাথায় ব্যাথা
পেনিসের মাথায় নানা কারণে ব্যথা হতে পারে তার মধ্যে সাধারণ বিষয় হচ্ছে আঘাত লাগলে। অনেক সময় ফুটবল ক্রিকেট যে কোন ধরনের খেলা খেলতে গিয়ে পেনিসে আঘাত পায়। এটা ঠিক তখনই বুঝা না গেলে পরবর্তীতে এটা বোঝা যায়। কারণ লাগার সাথে সাথেই ব্যথা অনুভব না হলে পরে ঠিকই ব্যথা অনুভব হয়।
এছাড়াও পেনিসের মাথায় ফোড়া উঠলে তামার এত ব্যথা করতে পারে। ওরা চারপাশে সাদা পানির মত এবং মাঝখানে পুজ জমে থাকে। এবং এর ব্যথা অনেক বেশি হয় অনেকের ক্ষেত্রে এটা অসহ্য হয়ে যায়।
বিবাহিতদের পেনিসের মাথা ব্যথা করার কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত যৌন মিলন। অতিরিক্ত যৌন মিলনের ফলে পেনিসের মাথা ধর্ষণের ফলে ব্যাথার সৃষ্টি হয় কিংবা পেনিসের চামড়া অনেক সময় কেটে যায়। এর ফলে পেনিসের মাথায় ব্যথা হয়ে থাকে। তবে এটা এই ব্যথা তীব্র না। হালকা ব্যথা এবং টা পুরোপুরি খুব কম সময়ে ভালো হয়ে যায়।
পেনিসের মাথায় ঘা চিকিৎসা
পেনিসের মাথায় এলার্জি বা চুলকানির কারণে অনেক বেশি চুলকায়। চুলকাতে চুলকাতে অনেক সময় নখের আঁচড় লেগে যায় এবং পরবর্তীতে তা ঘায়ে পরিণত হয়। এই ঘা পরবর্তীতে এক মারাত্মক রূপ ধারণ করে। এবং এটা পেনিসের জন্য খুবই ক্ষতিকারক। এটাকে কোন সময় ছোট করে রাখা যাবে না এবংঅবহেলা করা উচিত নয়। ঘা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে গিয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। নিচে কিছু চিকিৎসার ব্যাপারে আলোচনা করা হলো-
ঘা শুকাতে মেডিকেটেড অয়েন্টমেন্ট ব্যবহার করুন (যেমন মিউপিরোসিন)। এটা ব্যবহারের ফলে হত জায়গা তাড়াতাড়ি শুকাবে এবং ক্ষতস্থানের ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক অর্থাৎ জীবাণু ধ্বংস হয়ে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে।
STD পরীক্ষা করান: বিশেষ করে যদি ঘা অনেকদিন না শুকায় বা ব্যথাযুক্ত হয়। না আপনার জীবন সঙ্গির উপরে প্রভাব পড়বে। তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়বেন। অর্থাৎ আপনার স্ত্রীর উপর এটি আক্রমণ করবে।
ঘা যদি পুঁজপূর্ণ বা রক্তপাতযুক্ত হয়, অবিলম্বে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। হাত দিয়ে কখনো এগুলোকে একা একা বের করবেন না। এর হলে সংক্রমণ আরো বাড়তে পারে। তাই যতটা সম্ভব এটা থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন।
পেনিসের মাথায় ফুসকুড়ি চিকিৎসা
ফুসকুড়ি সাধারণত অ্যালার্জি বা ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে।
চিকিৎসা: অ্যান্টিফাঙ্গাল পাউডার বা ক্রিম ব্যবহার করুন। এই ক্রিম বা পাউডার ব্যবহার করলে ফুসকুড়ি তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যাবে। কারণ এই ক্রিমের উপাদান গুলো ছত্রাকের মতো জীবাণুকে খুব সহজেই ধ্বংস করে ফেলে।
ত্বক শুষ্ক ও পরিষ্কার রাখুন। ত্বক শুষ্ক থাকলে রোগ জীবাণু কম সরাতে পারবে। ত্বক কোন সময় অপরিষ্কার রাখা যাবে না।ত্বক পরিষ্কার থাকলে ছত্রাক সংক্রমণ কম হবে। সিনথেটিক কাপড় পরা বন্ধ করুন কটনের অন্তর্বাস ব্যবহার করুন।
গরমে অতিরিক্ত ঘাম এড়ান। পকেটে টিস্যু কিংবা রুমাল নিয়ে বেড়ান এবং পায়ে হাটুর উপরের অংশে অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম ব্যবহার করুন।
পেনিসের মাথায় ফুসকুড়ি ঘরোয়া চিকিৎসা
পেনিসের মাথায় ফুসকুড়ির জন্য করে যেমন ডাক্তারের দেওয়া পরামর্শ আছে ঠিক তেমনি ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা আছে যেগুলো করলে পেনিসের মাথার ফুসকুড়ি দূর হয়। এর বিশেষ গুণ হলো এটার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই এবং একদম কেমিক্যাল ফ্রী। নিম্নলিখিত ঘরোয়া পদ্ধতিগুলো কিছু ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে-
- নিমপাতা ফুটানো পানি দিয়ে ধোয়া: প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে।
- দই বা টক দই ব্যবহার: প্রোবায়োটিক উপাদান সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
- নারিকেল তেল: প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- চন্দনের গুঁড়া ও গোলাপ জল মিশিয়ে লাগানো: ঠান্ডা ও প্রশান্তিদায়ক প্রভাব ফেলে।
নিম্নলিখিত এই ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অর্থাৎ এই ঘরোয়া চিকিৎসাগুলো গ্রহণ করলে পেনিসের মাথায় হওয়া ফুসকুড়ি থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।এ ঘরোয়া চিকিৎসা গুলো সঠিকভাবে নিলে অনেক উপকারে আসবে। এমনও হতে পারে পরবর্তীতে ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবে না।
লেখকের শেষ মন্তব্য
উপরে আর্টিকেলটির মাধ্যমে আশা করি পেনিসের মাথায় গুটি গুটি হওয়া চর্মরোগ দের ব্যাপারে ভালোমতো একটা জ্ঞান লাভ করতে পেরেছি। এছাড়াও গোপনাঙ্গের আরো অনেক রোগের নিরাময় অর্থাৎ চিকিৎসা সম্পর্কে জেনেছি। এছাড়াও গোপনাঙ্গে হওয়া অন্যান্য রোগের ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে একটা নির্ভুল ধারণা লাভ করতে পেরেছি। যা পরবর্তীতে আমাদের অনেক কাজে দেবে।
পেনিসের মাথায় গুটি, ফুসকুড়ি বা ঘা দেখা গেলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ, অনেক ক্ষেত্রেই এটি নিরীহ, আবার কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা না নিলে জটিলতাও হতে পারে। তবে এগুলোকে আমরা কখনো অবহেলা করব না এগুলোর প্রাথমিক অবস্থাতেই আমরা সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করার চেষ্টা করব। হলে পরবর্তীতে কোন বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না আমাদের।